ওয়েব ডেস্ক: এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তি (Biggest Slum In Asia) রয়েছে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীতেই। মুম্বইয়ের (Mumbai) ধারাভি (Dharavi Slum)। ঘিঞ্জি গলি, কারখানা, কর্মশালা আর হাজারো মানুষের বসতভিটে রয়েছে সেখানেই। তবে শিগগিরই ইতিহাসের পাতায় নাম মুম্বইয়ের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদ হারিয়ে যেতে চলেছে বুলডোজারের নিচে। শহর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও শিল্পপতি গৌতম আদানির (Gautam Adani) যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে এক বিরাট পুনর্বিকাশ প্রকল্প (Dharavi Redevelopment Project)। উদ্দেশ্য—বস্তি এলাকা ভেঙে ঝাঁ-চকচকে শহর তৈরি। তবে এই নগরায়নের জোয়ারে ধ্বংস হতে বসেছে লাখো মানুষের ঠিকানা।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে দুর্ভিক্ষ ও বন্যার হাত থেকে বাঁচতে এসে ধারাভিতে বসতি গড়েন গুজরাতের অনেক পরিবার। ধীরে ধীরে মৎস্যজীবীদের এই ছোট্ট গ্রাম মুম্বইয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং রূপান্তরিত হয় এশিয়ার বৃহত্তম বস্তিতে। আজ প্রায় ২৪০ হেক্টরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই অঞ্চলটিতে বাস করে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। অর্থাৎ, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩.৫ লাখ মানুষ সেখানে রোজ খায়-দায়-ঘুমোয়। সেই সঙ্গে চলে ধারাভির অসংখ্য ছোট শিল্প। মৃৎশিল্প, ট্যানারি, প্লাস্টিক ও ধাতব বর্জ্য পুনর্ব্যবহার সহ বিভিন্ন কাজ চলে দিনভর। জানলে অবাক হবেন এই বস্তির অন্দরে বছরে গড়ে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়।
আরও পড়ুন: ২ বছরে ৬১ লক্ষ অভিযোগ! রেলের পরিষেবায় চরম অসন্তুষ্ট যাত্রীরা
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ধারাভির বস্তি ভেঙে সেখানে কী করা হবে? সেখানের মানুষজন যাবেন কোথায়? কী হবে তাঁদের জীবিকা? ধারাভি পুনর্বিকাশ প্রকল্প অনুযায়ী ২০০০ সালের আগে থেকে সেখানে যারা বসবাস করেছেন, তাঁরা বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাবেন। ২০০০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে যাঁরা সেখানে এসেছেন, তাঁরা কম দামে ঘর কিনতে পারবেন। তবে ২০১১-র পর আসা মানুষদের ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ায় নিতে হবে। তবে শর্ত হল, শুধু নিচতলার মালিকরাই এই সুবিধা পাবেন। অথচ অর্ধেকেরও বেশি পরিবার থাকেন অবৈধভাবে নির্মিত ফ্ল্যাটের উপররের তলায়। এইসব শর্তাবলী শুনে ধারাভিবাসীর একাংশ যেমন স্যাঁতস্যাঁতে ঝুপড়ি ছেড়ে পাকা বাড়িতে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর, তেমনই অনেকেই আবার এটির নিন্দায় সরব।
ধারাভি পুনর্বিকাশ প্রকল্পের ৮০% শেয়ার রয়েছে আদানি গ্রুপের হাতে। প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করে তারা সাত বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছে। আদানি বলেছেন, তিনি “একটি মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন ধারাভি” গড়ে তুলতে চান। কিন্তু সমালোচকদের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে আসলে প্রাইম রিয়েল এস্টেট দখলের চেষ্টা চলছে। আদতে কী হতে চলেছে- উত্তর মিলবে সাত বছর পরেই।
দেখুন আরও খবর: